ভ্রূণ

ভ্রূণ টা যে কোন গভীরে এখন নিমজ্জিত; কেউ জানে না । নুনের পুটলি নিয়ে গ্রামের মাতব্বরেরা বাইরে অপেক্ষা করছে ; যার মধ্যে আমার বাবও আছে । প্রসবের যন্ত্রণায় ছটকাতে ছটকাতে মা তবুও চেষ্টা করছে বিগত বছর গুলোর মত এবার অজ্ঞান না হয়ে যেতে । আমি তখন পৃথিবীর জনন ইন্দ্রিয়ের দ্বারে ; জীবনের আলো নেব বলে ছটফট করছি ! আমার এই জন্মের বাসনা প্রচণ্ড যন্ত্রণা দিচ্ছে আমার মাকে । শেষ মেষ আমি অন্ধকার থেকে বাইরে বেড়িয়ে এলাম ।আমার মায়ের মুখে এখনো স্বস্তি নেই কেন ! ধাইমার মুখে এবার হাসি ফুটেছে । আমি গর্ব করে ভাবছি ; সার্থক হয়েছে আমার মায়ের জন্ম আমায় জন্ম দিয়ে । আমার সাত সাতটা দিদি নুনের রূপকথার পুটলিতে জারিত হবার পরে আমি জন্ম নিতে চলেছি অষ্টম গর্ভে শ্রী কৃষ্ণের মত । মা এবার সংজ্ঞাহীন নয় ধাইমাকে বলল -"নিমক ছিটা দো । " ধাইমা এক গাল হেসে আমার মায়ের ফুলের সাথে আমার নাভির যোগাযোগ ছিন্ন করতে করতে বলল; -'' বেটিয়া তেরা লেড়কা হুয়া হ্যাঁয় ।" আমাকে আমার মায়ের পাসে দিয়ে সুসংবাদের অপেক্ষায় থাকা পুরুষদের মিষ্টি বিলবার সন্দেশ দিতে গেল ধাইমা । আমি তখন বিছানায় হাত পা ছুড়ে খেলা করছি পৃথিবীর নতুন আলোয় এসে । কিন্তু আমার মায়ের মুখে কোন আনন্দনেই । চোখ গুলো কেমন হিংস্র হয়ে উঠেছে । বিছানা থেকে রক্ত স্নাত শরীরে কোনক্রমে উঠে দাড়িয়ে আমাকে একটা কুকুরের বাচ্চার মত ঘেটি ধরে তুলল নির্দয় নিষ্ঠুর রুদ্ধ মূর্তি কালীর মত । তার পর বিছানার নিচে থেকে বহু যত্নে লুকিয়ে রাখা নুনের গামলাটা বার করে তার মধ্যে চেপে ধরল আমাকে । তার চোখ থেকে দু ফোটা জল শুধু গড়িয়ে পড়লো । তবে মানবী সে নয় আঘাতে আঘাতে ঘোরতর পাষাণী যেমন টাই হওয়া উচিত ছিল । আমিই প্রথম পুরুষ মায়ের কাছে যে করুণার প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে আর্তনাদ করে উঠলাম । আমার মা এতো দিনে করুণা চেয়ে চেয়ে ঘৃণা করতে শিখেছে । আমাকে সে ঘেন্না করছে ।আমিতো তাদেরি প্রতিনিধি যারা তাকে শুধুই একটা মানুষ উৎপাদনের যন্ত্র বলে মনে করে । - জিয়ে গা তো ফির সাতায়ে গা । পুরুষের দল ছুটেএল আমার কান্না শুনে ; যার মধ্যে আমার বাপ, ঠাকুরদা জ্ঞাতি গুষ্টি আছে । ধাই মাও এসেছে পেছনে শাঁখ হাতে । ছোট কাকুর হাতের মিষ্টির হাঁড়িটা তিতকুটে হয়ে গেল । অনেক মেয়ে মরতে দেখেছে সবাই ; প্রথম এ দেশ দেখল পুরুষের ভ্রূণ নিকেশ হতে । একটা শঙ্খ ধ্বনি শুনতে পাচ্ছি আমি শঙ্খ ধনিটা ছড়িয়ে পড়ছে যুগ যুগ ধরে স্থবির পৃথিবীর বুকে । মা আমি পুরুষ না হয়ে মানুষ হলাম না কেন ?